একই সাথে স্বর্ণা ধান চাষে আগ্রহ কমেছে চাষিদের। এমনকি আগামীতে মোটা জাতের এই ধান চাষ না করার মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রি-৮৭ জাতের চিকন ধান প্রতি ৩৩ শতাংশ জমিতে ২৭-৩০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। স্বর্ণা ধানের ১৪৫ দিন জীবনকাল এবং ব্রি-৮৭ চিকন আমন ধানের জীবনকাল ১২৭ দিন। স্বর্ণা ধান কাটার ১৫ দিন আগেই ব্রি-৮৭ জাতের চিকন আমন ধান কাটা যায়। মোটা জাতের স্বর্ণা ও গুটিস্বর্ণা ধান বাজারে বিক্রি করতে গেলে আড়তদার বা মহাজনরা কথাই বলতে চান না।
আমন মৌসুমে উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-৮৭ জাতের চিকন আমন ধান চাষে চাষিদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কারণ চিকন জাতের আমন ধান বেশি দামে বিক্রি করা খুবই সহজ। আড়তদার, চাতাল মালিক ও মহাজনরা আগ্রহভরে খরিদ করছেন চাষিদের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, চিকন জাতের এই জাতটি উঁচু জমিতে লাগালেও আশানুরুপ ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া ব্রি-৮৭ জাতের ধান সময়ের ব্যবধান হিসেব করে চাষ করলে নির্ধারিত সময়ে ওই ধান কাটার পর সরিষা মুসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ডালজাতীয় ফসলের আবাদ করা যাবে।
নির্ধারিত মৌসুমের সময় অনুসারে এবং সরিষা কেটে বোরো চাষ করা যাবে অতি সহজে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউড থেকে উদ্ভাবিত ব্রি-৮৭ চিকন জাতের এই ধান চাষে যশোরের শার্শার চাষিদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার জানান, এ বছর পরামর্শক্রমে ১১টি ইউনিয়নের ৩০ জন চাষির মাধ্যমে ৩০ বিঘা জমিতে উন্নতজাতের চিকন ধানের চাষ করে প্রত্যেক চাষি সফল হয়েছেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউড থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকের মাধ্যমে চাষ করে ফলন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জীবনকাল নির্ধারণ করে আমন ধানের ব্রি-৮৭ জাতের ধানটি চাষিদের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে।
ধান গবেষণা সূত্র জানায়, পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছের গড় উচ্চতা ১২২ সেন্টিমিটার, ধান গাছের কাণ্ড শক্ত, গাছ লম্বা হলেও হেলে পড়ে না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কোনো কোনো সময় ঝড়ো হাওয়ার কারণে হেলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাতা হালকা সবুজ, ডিগ পাতা খাড়া এবং ব্রি-৪৯ জাতের চেয়ে লম্বা ও প্রশস্ত। ধান পাকার সময় কাণ্ড ও পাতা সবুজ থাকে, চালের আকার ও ধানের আকৃতি চিকন লম্বা, এ ধানের অ্যামাইলোজ ২৭ শতাংশ। ব্রি-৮৭ এর জীবনকাল ব্রি-৪৯ এর চেয়ে ৭ দিন কম এবং ফলনও বেশি। চিকন লম্বা জাতের ধান উৎপাদনে চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
রোপন পদ্ধতি: ১ আষাঢ় থেকে ২১ আষাঢ়ের মধ্যে ব্রি-৮৭ জাতের ধান চাষ করতে হয়। চারার বয়স ২৫-৩০ দিন হতে হবে। প্রতি গুছিতে ২-৩টি চারা রোপণ করতে হবে এবং ২৫-১৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে। ২১ আষাঢ় মাসের পরেও এ ধান চাষ করা যাবে তবে ওই জমিতে নির্ধারিত সময়ে সরিষা চাষ করার পর কর্তন করে বোরো ধান চাষ করা যাবে না।
ধানের ফলন ঠিক রাখতে হলে চারার বয়স ২৫-৩০ দিন হতে হবে। প্রতি বিঘা জমিতে ২৪ কেজি ইউরিয়া, টিএসপি ১১ কেজি, এমওপি ১৩ কেজি, জিপসাম ৯ কেজি এবং জিংক সালফেট ১.৬ কেজি সার দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে অঞ্চল ভিত্তিতে সারের মাত্রা কিছু বাড়াতে পারেন চাষিরা। চাল শক্ত ও পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত পানির প্রয়োজন হলে সেচ দিতে হবে। ব্রি-৮৭ জাতের রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেকাংশে কম। পোকামাকড় রোগ-বালাই দেখা দিলে অবশ্যই কৃষি অফিসের সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করতে হবে।